এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মুদ্রার বিপরীতে ডলারের তেজি ভাব চলতি সপ্তাহে কিছুটা কমেছে। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে মার্কিন ডলার শক্তিশালী হলে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও ডলার–সংকটে পড়ে। পণ্য আমদানি খরচ যায় বেড়ে। ডলারের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।
জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার আরও বাড়াবে, এমন কথা ছড়িয়ে পড়েছে মুদ্রাবাজারে। তাতে ইয়েনের দর বেড়েছে। জাপানি ইয়েনের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিন্ন মুদ্রা ইউরোর দরও বেড়েছে। এ সপ্তাহের শুরুতে ইউরোর দর দাঁড়ায় ১ দশমিক শূন্য ৮৭৪ ডলার। তবে তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি—১ দশমিক শূন্য ৮১৬ ডলারে নেমে আসে। অস্ট্রেলীয় ডলারের মানও গত আগস্টের পর এই প্রথম শূন্য দশমিক ৭ ডলারে ওঠে। পরে তা শূন্য দশমিক ৬৯ ডলারে নেমে আসে।অন্যদিকে গত নভেম্বর থেকে ডলারের সাপেক্ষে পাউন্ড স্টার্লিংয়ের দরও ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। আর এই সবকিছুর ফল হলো ইউএস ডলার ইনডেক্সের মান পড়ে যাওয়া। গত সাত মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ১০১ দশমিক ৭৭ পয়েন্টে নেমে আসে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদ বৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে। (রয়টার্স)
২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গত কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হয়। তা মোকাবিলায় দফায় দফায় নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে ফেডারেল রিজার্ভ। তাতে বন্ডের সুদহারও বেড়ে যায়। সারা পৃথিবীর বিনিয়োগকারীরা ডলারভিত্তিক বন্ডের পেছনে ছোটেন। বেড়ে যায় ডলারের চাহিদা। ডলারের বিনিময় হারও বৃদ্ধি পায়। এখন বিনিয়োগকারীরা বুঝতে পারছেন, ফেডারেল রিজার্ভ আর অত বেশি হারে নীতি সুদহার বাড়াবে না। যদিও তা কমানোর বাস্তবতা এখনো আসেনি বলেই মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
ফেড আগ্রাসীভাবে নীতি সুদহার বৃদ্ধি করায় ২০২২ সালে ডলার সূচক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, যা ছিল ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ডলারের দর এখনই পাইকারি হারে পড়ে যাবে না বলেই মনে করেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা মনে করছেন, ফেডারেল রিজার্ভ যদি উল্লেখযোগ্য হারে নীতি সুদহার কমায়, তাহলেই কেবল ডলারের উল্লেখযোগ্য দরপতন হতে পারে।
দর কিছুটা কমলেও বাজারে মার্কিন ডলার স্থিতিশীল আছে। এই মুহূর্তে অনেক কিছু নির্ভর করছে জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর। তারা যদি আজ বুধবারের বৈঠকে নীতি সুদহার আরেকটু বাড়ায় বা সুদ নিয়ন্ত্রণ নীতি একেবারে বাতিল করে দেয়, তাহলে ইয়েনের দর আরও বাড়তে পারে।
যে কারণে বাড়ে ডলারের দর
অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা এখন সারা বিশ্বকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। একই সময়ে আর্থিক খাতে নিয়ন্ত্রণমূলক নানা পদক্ষেপ মন্দার আশঙ্কা আরও ঘনীভূত করছে। এই মন্দার আশঙ্কায় গত বছর মার্কিন ডলার এতটা শক্তিশালী হয়েছে।
মার্কিন ডলার যে উত্তাপ ছড়াচ্ছে, তা বিশ্বের সবখানের মানুষ টের পাচ্ছে। জ্বালানির আমদানি মূল্য বৃদ্ধির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। বিশ্ববাণিজ্যের সিংহভাগই মার্কিন ডলারে হওয়ায় তার এত তেজ। বর্তমান বাস্তবতায় সেটি আরও বেশি করে অনুভূত হচ্ছে। ইউরোপ, এশিয়াসহ নানা অঞ্চলের মুদ্রাকে কেবল অস্থিরতার মধ্যে ফেলেনি, নিম্নমুখী করে ফেলেছে ডলারের উত্তাপ।