রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকা ধানমন্ডিতে গত ১৭ ডিসেম্বর রাত ১০.৪০ এ জিগাতলার একজন ব্যাবসায়ী মেহেদী হাসান এবং তার স্ত্রীর রিকশা করে বাড়ি যাচ্ছিলেন। রিকশাটি ধানমন্ডি ৭/এ, সাতমসজিদ রোড এ পৌঁছালে দুইজন মোটরসাইকেল আরোহী পেছন থেকে এসে তাদের ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে ব্যাবসায়ী মেহেদী হাসান এর সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের ব্যাগে ছিল নতুন আইফোন ১৪ প্র ম্যাক্স, এবং একটি আইফোন ৭ সহ আরও মূল্যবান নানা সামগ্রী যার মূল্য প্রায় দুই লক্ষ টাকার মত। সেই দম্পতি ধানমন্ডি থানায় রাতে জিডি করেন এবং পুলিশি সহায়তা চান।
ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় ছিনতাই, ছিনতাইয়ে বাধা দেওয়ায় ছুরিকাঘাতে খুনের ঘটনাও ঘটছে। আবাসিক এলাকায় সন্ধ্যা থেকে শুরু হলেও জনসমাগম এলাকায় মধ্যরাত ও ভোরের দিকে সবচেয়ে বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।
ঢাকা শহরের গত ১০ বছরের ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কিছু ঘটনায় বিচার হলেও অধিকাংশের অগ্রগতি নেই। ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে অধিকাংশ অপরাধী। গত নয় মাসের (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) হিসাব অনুযায়ী, রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে ৭২টি। তবে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে ৩৮টি। যা গত ছয় মাসের চেয়ে অনেক বেশি। এরমধ্যে ৮৮ ভাগ ছিনতাইকারীর বিচার হয়নি। আইনের দুর্বলতা যতটা, তার চেয়ে বেশি পদ্ধতিগত ও সদিচ্ছার অভাব। এছাড়া তদন্ত প্রক্রিয়ার মধ্যে বড় ধরনের ঘাটতি আছে।
ধানমন্ডিসহ আশপাশের এলাকায় টানা পার্টি ও অস্ত্রের মুখে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে বেশি। ফাঁকা রাস্তায় নির্বিঘ্নে ছিনতাই করছে টানা পার্টি। তারা বিভিন্ন গলিতে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরছে, সুযোগ মতো রিকশায় থাকা যাত্রী ও পথচারীদের মোবাইল ও ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ওই সময় রাস্তা ফাঁকা থাকায় কোনও বাধা ছাড়া নিরাপদে চলে যাচ্ছে। আর একটি গ্রুপ অস্ত্রের মুখে ছিনতাই করছে। তারা নিজেদের সঙ্গে থাকা অস্ত্র বের করে মূল্যবান জিনিসপত্র দিতে বলছে। কেউ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেই আঘাত করছে, এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে।
২২ অক্টোবর রাতে ধানমন্ডি লেকে হাঁটতে বের হয়ে ছিনতাইকারীদের হাতে খুন হন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার শাহাদত হোসেন মজুমদার (৫১)। ওই ঘটনায় চার কিশোরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন, মো. রাব্বি, সোহেল, সজিব ও দোলাল। এরমধ্যে মো. রাব্বি, সোহেল ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে।
কয়েক বছর আগেও শুনেছি আমরা এই টানা পার্টির কারনে এক শিশু প্রাণ হারিয়েছে তার মার কাছ থেকে রিকশাতে যাওয়ার সময় ব্যাগ টান দেয়ার কারনে। আরো শুনেছি প্রিয়াঙ্কার নির্মম হত্যা কান্ড এই টানা পার্টির তৎপরতার কারনে।
পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, অধিকাংশ ঘটনায় দেখা যাচ্ছে ভুক্তভোগীরা মামলা করতে চান না। তারা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য শুধু জিডি করেই চুপ থাকেন। যে ঘটনায় মামলা হয়, আজ হোক আর কাল হোক অপরাধীদের আইনের আওতায় আসতেই হবে। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। পুলিশের একার পক্ষে অপরাধ দমন করা সম্ভব না। ভুক্তভোগীদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
সরকারের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য রাজধানীতে সন্ধার পর লাইট বন্ধ করাতে, অনেক জায়গা নির্জন এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন,সিসি টিভি ক্যামেরা গুলোতে অপরাধী দের যানবাহন এর নাম্বার বুঝা যায় না।
এমত অবস্থায় সরকার এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ব্যাপারটি গুরুতর গম্ভীর ভাবে নেয়ার জন্য।
আর কত মূল্যবান সামগ্রী হারাতে হবে আমাদের? আর কত জীবন ঝুঁকি নিয়ে চলতে হবে আমাদের? আমাদের রাস্তা কি হবে না সুরক্ষিত?
পুরো ঢাকাবাসী আমাদের সড়ক সুরক্ষিত দেখতে চায়। এটা কি হবে?