১০ কারণে দুর্ঘটনা, সমাধান নেই – ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

dhaka-ctg-highwaytail-res-collected
Spread the love

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার (দাউদকান্দির টোল প্লাজা থেকে চট্টগ্রাম সিটি গেট পর্যন্ত) ২০৬ কিলোমিটার অংশে দুই বছরে ৪৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। চার শতাধিক দুর্ঘটনায় এই প্রাণহানির পাশাপাশি আহত হয়েছেন এক হাজারের বেশি মানুষ। হাইওয়ে পুলিশ এসব দুর্ঘটনার ১০টি কারণ চিহ্নিত করতে পারলেও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না।

কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের তথ্য মতে, ২০২১ সালে ২৫১টি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে গ্রাণহানি হয়েছে ২৪৭ জনের। আর ২০২২ সালে ১৯২টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৯৪ জন। নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগ ছিলেন পথচারী। মহাসড়কের এই এলাকাটিতে দুর্ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে ৫৪টি বিপজ্জনক ইউটার্ন, ২৮২টি ফিডার (বিকল্প/সংযোগ) সড়ক, সিএনজি ফিলিং স্টেশন রয়েছে ৯৯টি, মহাসড়ক সংলগ্ন ইজারা দেওয়া হাট-বাজার ২২টি, গার্মেন্ট ও শিল্প-কারখানা ৫৬টি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৬৯টি, হাসপাতাল-ক্লিনিক ১৮টি, বাসস্টেশন ৫৬টি, পদচারী সেতু ৩৪টি এবং দুই-তিন চাকার যানবাহনে কম দূরত্বের যাত্রীদের যাতায়াত।

দুর্ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নিহতদের মধ্যে শিক্ষার্থী, শ্রমিক, রোগী পরিবহন, পথচারী চলাচল এবং ফিলিং স্টেশনে গ্যাস নিতে এসে প্রাণহানি। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পদচারী সেতু থাকলেও তা ব্যবহারের আগ্রহ কম। এসব কারণে ৭০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে। আর বাকি ৩০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও রাস্তায় যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো-নামানোর জন্য। যত্রতত্র ইউটার্ন আর ফিডার সড়কের মাথায় দুর্ঘটনা ঘটে বেশি।

সম্প্রতি চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাবুর্চি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ইউটার্নে রিফ্লেক্টিভ (প্রতিফলিত) স্টিকার নেই। রাতে এসব স্থানে দুর্ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা এ জন্য লাল নিশান টাঙিয়ে দিয়েছে।

ইউটার্নে প্রতিফলিত স্টিকার লাগানোর দায়িত্বে থাকা সড়ক ও জনপথ বিভাগ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীত চাকমা জানান, ইউটার্নগুলোতে প্রতিফলিত স্টিকারের সাইনবোর্ড ভেঙে যাওয়ায় লোকজন তা নিয়ে গেছে। মেরামতকাজ চলছে। শিগগির নতুন সাইনবোর্ড স্থাপন করা হবে।

মাঠ পর্যায়ে কর্মরত হাইওয়ে পুলিশের বিভিন্ন থানার অন্তত পাঁচজন সদস্য জানান, নিত্যপ্রয়োজনে মহাসড়কের আশপাশের এলাকার মানুষদের কম দূরত্বের চলাচলে একমাত্র উপায় সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেলসহ কিছু ছোট যানবাহন। আলাদা লেন না থাকায় দ্রুতগতির যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগুলোকে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়। দুর্ঘটনা কমাতে হলে এসব যানের জন্য আলাদা লেন তৈরি করতে হবে।

কুমিল্লা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘সড়ক-মহাসড়কে ছোট যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ কিংবা এদের জন্য আলাদা লেন করার দাবি দীর্ঘদিনের। জাতীয়ভাবে এসব সমস্যা সরকারের নজরে আনা হলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া বিপজ্জনক ইউটার্ন ও সংযোগ সড়কগুলো থেকে হঠাৎ করে ছোট যান সামনে চলে আসায় দুর্ঘটনা বেশি ঘটে।’

জানতে চাইলে কুমিল্লা অঞ্চলের হাইওয়ে পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত বছরে চার হাজারের অধিক যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ ১৭ হাজার চালককে সতর্ক করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ চালক-সহকারীদের মাঝে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে অন্তত চার লাখ। গত বছর নিয়ম অমান্য করায় ১৪ হাজার ৪৩০টি সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ অন্যান্য নিষিদ্ধ যানবাহন আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া মহাসড়ক সংলগ্ন বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানা এলাকায় দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আমাদের টহল টিম জোরদার করা হয়েছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *