ইতিকাফ ভঙ্গ হওয়ার কারণ

itikaf-collected
Spread the love

ইতিকাফকারীর জন্য বিশেষ কিছু নির্দেশনা ইসলামে দেওয়া আছে। আছে কিছু করণীয় ও বর্জনীয় এবং বৈধ ও অবৈধ বিষয়। নিম্নে সেসব বিষয়ে আলোচনা করা হলো—

ইতিকাফকারীর জন্য যেসব কাজ করা জায়েজ

ইতিকাফকারীর জন্য মসজিদে পানাহার ও ঘুমানোর অনুমতি আছে। তবে মসজিদের পবিত্রতা রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। এ ব্যাপারে সব ইমামদের ঐকমত্য আছে। তবে এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত;  কেননা আল্লাহর প্রতি একাগ্রচিত্ত ও একনিষ্ঠভাবে মনোনিবেশের জন্য কম খাওয়া, কম ঘুমানো সহায়ক বলে বিবেচিত।

আর জরুরি কাজের জন্য মসজিদের বাইরে যাওয়াও বৈধ। নিজ পরিবারের লোকদের বিদায় জানানোর জন্য বের হওয়া জায়েজ আছে। তবে বিনা প্রয়োজনে বের না হওয়াই ভালো।

এ ছাড়া গোসল করা, চুল আঁচড়ানো, তেল ও সুগন্ধি ব্যবহার, ভালো পোশাক পরা—এসবের  অনুমতি আছে। আয়েশা (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি মাসিক অবস্থায় নবী (সা.)-এর মাথার কেশ বিন্যাস করে দিতেন, যখন রাসুল (সা.) মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় থাকতেন, আয়েশা (রা.) তাঁর কক্ষে থাকা অবস্থায় রাসুল (সা.)  মাথার নাগাল পেতেন। (বুখারি, হাদিস : ২০৪৬)

ইতিকাফকারীর পরিবার তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবে, কথা বলতে পারবে। কেননা নবী (সা.)-এর স্ত্রীরা  ইতিকাফকালীন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। কিন্তু সাক্ষাৎ দীর্ঘ না হওয়া বাঞ্ছনীয়।

যে কাজ দ্বারা ইতিকাফ ভঙ্গ হয়

ইতিকাফের স্থান থেকে ইসলামসম্মত প্রয়োজন বা স্বাভাবিক প্রয়োজন ছাড়া বের হয়ে গেলে তবে ইসলামসম্মত প্রয়োজন হলে মসজিদের বাইরে বের হওয়া যায়।

স্ত্রী সহবাস করলে, চাই বীর্যপাত হোক বা না হোক। ইচ্ছাকৃত হোক বা ভুলক্রমে হোক। সহবাসের আনুষঙ্গি কাজ যেমন চুম্বন, আলিঙ্গন ইত্যাদির কারণে বীর্যপাত হলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। তবে চুম্বন ইত্যাদির কারণে বীর্যপাত না হলে ইতিকাফ বাতিল হবে না। তবে ইতিকাফ অবস্থায় এসব করা হারাম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের যৌন মিলন করো না যখন তোমরা মসজিদে ইতিকাফে থাকো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৭)

এ ছাড়া পাগল হয়ে গেলে, নারীদের হায়েজ-নেফাস হলে এবং কেউ ধর্মত্যাগী (মুরতাদ) হলে ইতিকাফ ভেঙে যায়।

মসজিদ থেকে বের হওয়ার বিধান

১.  ইতিকাফকারী যদি বিনা প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হয় তাহলে তার ইতিকাফ ভেঙে যাবে।

২.  আর ইতিকাফের স্থান থেকে যদি মানবীয় প্রয়োজন মিটানোর জন্য বের হয় তাহলে ইতিকাফ ভঙ্গ হবে না।

৩.  মসজিদে থেকে পবিত্রতা অর্জন সম্ভব না হলে মসজিদ থেকে বের হওয়ার অনুমতি আছে।

৪.  বাহক না থাকার কারণে ইতিকাফকারীকে যদি পানাহারের  প্রয়োাজনে  বাইরে যেতে হয় অথবা মসজিদে খাবার গ্রহণ করতে লজ্জা বোধ হয়, তাহলে এরূপ প্রয়োাজনে বাইরে যাওয়ার অনুমতি আছে।

৫.  যে মসজিদে ইতিকাফে বসেছে সেখানে জুমার নামাজের ব্যবস্থা না থাকলে জুমার নামাজ আদায়ের প্রয়োজনে মসজিদ থেকে  বের হওয়া ওয়াজিব এবং আগেভাগেই রওনা হওয়া তার জন্য মুস্তাহাব।

৬.  ইসলামসমর্থিত ওজরের কারণে ইতিকাফকারী মসজিদ থেকে বের হতে পারে।

৭.  কোনো নেকির কাজ করার জন্য ইতিকাফকারীর মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়। যেমন রোগী দেখতে যাওয়া, জানাজায় উপস্থিত হওয়া ইত্যাদি। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘ইতিকাফকারীর জন্য সুন্নত হলো, রোগী দেখতে না যাওয়া, জানাজায় অংশ গ্রহণ না করা, স্ত্রী স্পর্শ না করা এবং সহবাস না করা এবং খুব বেশি প্রয়োজন না হলে মসজিদ থেকে বের না হওয়া।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৪৭৩)

৮.  ইতিকাফ-বিরুদ্ধ কোনো কাজের জন্য ইতিকাফকারীর মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়। যেমন ক্রয়-বিক্রয়, স্বামী-স্ত্রীর মিলন ইত্যাদি।

ইতিকাফকারীর জন্য যা যা মাকরুহ

ইতিকাফ অবস্থায় চুপ থাকলে সওয়াব হয়, এই মনে করে চুপ থাকা মাকরুহে তাহরিমি। বিনা প্রয়োজনে পার্থিব কোনো কাজে লিপ্ত হওয়া মাকরুহে তাহরিমি। যেমন কেনাবেচা করা ইত্যাদি। তবে একান্ত প্রয়োজনবশত, যেমন: ঘরে খাবার নেই এবং সে ছাড়া অন্য কোনো বিশ্বস্ত মানুষও নেই—এরূপ অবস্থায় মসজিদে মালপত্র উপস্থিত না করে কেনাবেচার চুক্তি করতে পারে।

ইতিকাফের মুস্তাহাব বিষয়

১.  বেশি বেশি নামাজ পড়া, কোরআন তিলাওয়াত, অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ তাফসির পড়া এবং ইসলামী সাহিত্য ও বই-পুস্তক পড়া, অর্থাৎ দ্বিনি ইলম অর্জন করা।

২.  বেহুদা কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকা। ঝগড়াঝাটি এবং গালমন্দ না করা।

৩.  মসজিদের একটি অংশে অবস্থান করা। নাফে (রহ.) থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ বিন উমর (রা.) আমাকে মসজিদে নববীতে রাসুল (সা.)-এর ইতিকাফের সুনির্দিষ্ট স্থানটি দেখিয়েছেন। (সহিহ মুসলিম)

নারীদের ইতিকাফ

পুরুষের মতো নারীরাও ইতিকাফ করতে পারবে। ঘরের যে অংশে সাধারণত নামাজ পড়া হয় সেখানে যদি পর্দার যাবতীয় শর্ত পাওয়া যায় এবং সার্বিক দিক বিবেচনা করে নিরাপদ মনে হয়, তাহলে সেখানে ইতিকাফের জন্য নির্দিষ্ট করে নেবে। তারপর সেখানে বসে ইবাদত-বন্দেগি করা শুরু করে দেবে।

ইতিকাফ এমন এক বৈধ নির্জনতা, যেখানে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত, জিকির ও আনুগত্যের উদ্দেশ্যে নিজের আত্মা ও সত্তাকে একান্তভাবে নিয়োজিত করে। তাই ইতিকাফের বিরাট সওয়াব ও মর্যাদা লাভ করার জন্য সবারই সচেষ্ট হওয়া দরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *