কেমন আছে আপনার কিডনি? কী করে বুঝবেন কেমন চলছে শরীরের কিডনি?

kidney-collected
Spread the love
kidney dialysis, kidney function test, kidney location, structure of kidney, normal kidney size, kidney meaning in bengali, serum creatinine, creatinine test, creatinine levels, serum creatinine test, normal creatinine levels, when to worry about creatinine levels, creatinine normal range, s creatinine normal range, serum creatinine normal range, s creatinine test bangla,

শরীরে কিছু সমস্যা দেখা দিলে সবাই ভেবে নেই কিডনিতে কোনো সমস্যা যাচ্ছে। যেমন- ঘন ঘন প্রস্রাব করছেন, শরীরে চুলকানি বেড়ে গেছে, কোনো কারণ ছাড়াই ক্লান্ত লাগে, ঘুমে খুব ডিস্টার্ব হয়, ক্ষুধা কমে যায়।

সমস্যাগুলো শুধু কিডনির কোনো জটিলতার কারণে হয় না। এগুলো শরীরের অন্য অনেক অংশের সঙ্গে জড়িত। তাই সহজে বলা যায় না যে কিডনি খারাপ হয়ে গেছে।

ঘুম থেকে উঠেই দেখছেন চোখের নিচ ইদানীং ফোলাফোলা লাগে। একটুখানি বসে থাকতে টের পান পায়ের গোড়ালি ফুলে গেছে, পা ভারী হয়ে গেছে এবং পায়ে পানি এসেছে। এমন সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলে রক্তের কিছু পরীক্ষা দেওয়ার সঙ্গে একটি টেস্ট করতে বলেন-ব্লাড ক্রিয়েটিনিন টেস্ট।

ক্রিয়েটিনিন টেস্ট দিয়ে চিকিৎসকরা বুঝতে চান রোগীর কিডনির অবস্থা কেমন। কিডনি ভালো থাকলে ক্রিয়েটিনিন লেভেল স্বাভাবিকের মধ্যে থাকে। অনেক বেশি হয়ে গেলে কিডনি ফেইলুরের দিকে যেতে থাকে।

শুরুতে আসি ক্রিয়েটিনিন কি।

ক্রিয়েটিন থেকে ক্রিয়েটিনিন।

শরীরে পেশির কাজ করতে শক্তির দরকার। এই শক্তির রাসায়নিক রূপ ATP। এই ATP জোগানোর একটি কেমিক্যাল ক্রিয়েটিন। ক্রিয়েটিন এক ধরনের এমাইনো এসিড। আমরা যখন মাংস খাই, তখন শরীরের মাসল, ব্রেইন, লিভার ক্রিয়েটিন সংগ্রহ করে মাংস থেকে এবং তা সঞ্চয় করে রাখে। যখন পেশিগুলোর অনেক বেশি পরিশ্রমের প্রয়োজন পড়ে তখন ক্রিয়েটিন শক্তি সরবরাহে সাহায্য করে। রসায়ন প্রক্রিয়ায় শক্তি জোগাতে গিয়ে কিছু বর্জ্য তৈরি হয়। ক্রিয়েটিন থেকে তৈরি হওয়া এ বর্জ্যকে বলে ক্রিয়েটিনিন। শরীরে বা রক্তে কোনো বর্জ্য তৈরি হলে কিডনি সেগুলোকে প্রস্রাবের মধ্যে দিয়ে বের করে দেয়। কিডনি হলো শরীরের ছাঁকনি। এখন সেই কিডনির ফিল্টার যদি ঠিকমতো কাজ না করে তখন শরীরের স্বাভাবিক পেশিগুলোর শক্তি জোগানের কাজে সহায় করা ক্রিয়েটিন থেকে উৎপাদিত বর্জ্য ক্রিয়েটিনিন শরীরে জমতে থাকে। তার মানে শরীরে ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ বেশি বেড়ে গেলে বুঝতে হবে কিডনির ফিল্টার ঠিকমতো কাজ করছে না।

পুরুষের শরীরে ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক রেঞ্জ ০.৭ থেকে ১.৪ এবং নারীর ০.৬ থেকে ১.২ mg/dL। যখন এ মাত্রাটি ৬ থেকে ১০ mg/dL হয়ে যায়, বুঝতে হবে কিডনির ক্ষমতা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে।

এ স্বাভাবিক রেঞ্জটি রক্তে ক্রিয়েটিনিন টেস্ট করে বোঝা হয়। নাম : সিরাম ক্রিয়েটিনিন টেস্ট। এটি এ মাত্রায় থাকলে বুঝতে হবে হেলদি কিডনি। কিডনির স্বাস্থ্য পরীক্ষায় তাই চিকিৎসকরা শরীরে কতটুকু ক্রিয়েটিনিন আছে, সেটা জানার চেষ্টা করে।

শুধু কিডনির স্বাস্থ্য কেমন, এটি দেখতে রক্তে ক্রিয়েটিনিন টেস্ট করা হয় না। চিকিৎসকরা কারও ওভারঅল স্বাস্থ্যের কন্ডিশন বুঝতে রুটিন পরীক্ষা হিসাবে রক্তের ক্রিয়েটিনিন টেস্ট করেন। কারণ দেখা গেছে শরীরে কিছু ক্রনিক স্বাস্থ্য প্রবলেম, ডায়াবেটিস, হার্ট ডিজিজ, হাই ব্লাড প্রেশার, ক্রনিক কিডনি ডিজিজ, এমনসব সমস্যা থাকলে রক্তে ক্রিয়েটিনিন লেভেল বেড়ে যায়।

এ কারণে কিডনির সঙ্গে হার্ট, লিভার, ব্লাড ইত্যাদি এবং ওভারঅল স্বাস্থ্য কেমন, এটি বুঝতে ডাক্তাররা একটি টেস্ট দেন, যে টেস্টটির মাধ্যমে শরীরে ১৪টি রাসায়নিক উপাদানের কতটুকু উপস্থিতি আছে, তা বোঝার চেষ্টা করা হয়। একে বলে CMP বা কম্প্রিহেন্সিভ মেটাবলিক প্যানেল। গ্লুকোজ, প্রোটিন, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, এলবুমিন, ক্রিয়েটিনিন, রক্তে এমনসবের উপস্থিতির মাত্রা পরীক্ষা করা হয়।

রক্তের এমন টেস্টটি করার পর যদি দেখে যে রক্তে ক্রিয়েটিনিন লেভেল স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি, তখন চিকিৎসকরা কিডনির অবস্থা আরও ভালোভাবে বুঝতে রোগীর অন্য উপসর্গ অনুযায়ী চার ধরনের ক্রিয়েটিনিন টেস্টটার একটি বা একাধিক করতে দেন।

ব্লাড বা সিরাম ক্রিয়েটিনিন টেস্ট, ইউরিন ক্রিয়েটিনিন টেস্ট, ক্রিয়েটিনিন কাইনেজ টেস্ট-এক ধরনের নির্দিষ্ট প্রোটিনের পরিমাণ দেখতে, ক্রিয়েটিনিন ক্লিয়ারেন্স টেস্ট।

টেস্টে ক্রিয়েটিনিন লেভেল নরমাল চেয়ে সামান্য বেড়ে গেলে চিন্তার কারণ নেই। এমন বেড়ে যাওয়া মানে কিডনি খারাপ হয়ে গেছে, এমনটি ভাবার কারণ নেই। অনেকসময় কিছু কারণে রক্তে এমন ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। যেমন-টেস্টটার আগের কয়েকদিন আপনি নিয়মিত ব্যায়াম করতেন বা অনেক পরিশ্রমের কাজ করেছেন। এমন অবস্থায় ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। কারণ আপনার মাসল অনেক বেশি ক্রিয়েটিন ব্যবহার করছিল ব্যায়াম কিংবা কাজ করতে, অনেক বেশি পরিমাণ ক্রিয়েটিনিন স্বল্প সময়ে শরীরে তৈরি হয়েছে, যা এখনো শরীর থেকে বের হয়নি। টেস্টের আগে নিয়মিত বেশি পরিমাণ সি-ফুড কিংবা রেড মিট অনেক খেলে রক্তে ক্রিয়েটিনিন সাময়িক বেড়ে যেতে পারে। কিছু কিছু মেডিসিন রক্তে ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। যেমন- এন্টিহিস্টামিন ট্যাবলেট, এন্টিবায়োটিকস।

রক্তে ক্রিয়েটিনিন লেভেল বেড়ে যাওয়া মানেই কিডনি শেষ হয়ে গেছে, এমনটি ভাবার কারণ নেই। চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন, বেড়ে যাওয়ার সঠিক কারণটি খুঁজে বের করুন এবং সেটির ট্রিটমেন্ট করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *