টিন সার্টিফিকেট কী, কেন ও কীভাবে করতে হয়?

tin certificate-collected
Spread the love

আমাদের দৈনন্দিন জিবনে অনেক ক্ষেত্রেই আয়কর নিবন্ধন বা টিন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে ব্যাংক থেকে লোন কিংবা সরকারি বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা নিতে কিংবা কর পরিশোধ করতে প্রয়োজন হয় আয়কর নিবন্ধন সনদ বা টিন সার্টিফিকেট।

বর্তমানে এখন অনলাইনেই এ কাজ করা যায়। মাত্র কয়েক মিনিটেই অনলাইনে ই-টিন সার্টিফিকেট করে নিতে কোন সমস্যা হয় না। এর জন্য প্রয়োজন নেই কোনো ফির।

একজন ব্যক্তি মাত্র একবারই টিন সার্টিফিকেট করতে পারবেন। কোনোভাবেই আপনি ডুপ্লিকেট আয়কর নিবন্ধন বা টিন করতে পারবেন না। একবার টিন সার্টিফিকেট করা হলে আয়কর নিবন্ধন ওয়েবসাইটে লগইন করে টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করতে পারবেন। আপনি নিজের নামে কিংবা আপনার কোম্পানির নামে কীভাবে টিন সার্টিফিকেট করবেন, তা বিস্তারিত বিশ্লেষণ করছি নিচে।


মনে রাখবেন, ডাউনলোড করা টিন সার্টিফিকেট হারিয়ে গেলে কিংবা নষ্ট হয়ে গেলে আয়কর নিবন্ধন ওয়েবসাইট থেকে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করে আবার টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করতে পারবেন। তাই ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড যত্নসহকারে সংরক্ষণ করুন।

টিন সার্টিফিকেট কী?

টিন বা টিআইএন-এর পূর্ণরূপ হলো, ট্যাক্সপেয়ার আইডেনটিফিকেশন নাম্বার। এটি একটি বিশেষ নাম্বার, যার সাহায্যে বাংলাদেশে করদাতাদের শনাক্ত করা হয়। টিন সার্টিফিকেট মূলত করদাতাদের নাম্বারটিই বহন করে থাকে। অর্থাৎ, টিআইএন বা টিন সার্টিফিকেট একজন করদাতার পরিচয়পত্রের মতোই কাজ করে।
 

টিন সার্টিফিকেট কেন করবেন?

করদাতা হিসেবে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত করার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চালু করেছে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে কয়েকটি সহজ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার মাধ্যমে আপনি একটি ডিজিটাল টিন সার্টিফিকেট পাবেন। এখানে আপনাকে ১২ ডিজিটের একটি টিন নাম্বার প্রদান করা হবে।

যারা আগে টিন সার্টিফিকেট করেছেন কিংবা যাদের টিন নাম্বার ১২ সংখ্যার কম, তাদের নতুন টিন সার্টিফিকেট করতে হবে। অর্থাৎ, তারা রি-রেজিস্ট্রেশন করে ১২ ডিজিটের টিন নাম্বার গ্রহণ করবেন।

কখন টিন সার্টিফিকেট করবেন?

আপনার বছরে উপার্জন যদি ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ওপরে হয়, তাহলেই আপনি ইনকাম ট্যাক্স দেবেন। তার আগে আপনাকে অবশ্যই ইনকাম ট্যাক্স ফাইল/ফরম পূরণ করার আগে টিন সার্টিফিকেট করে নিতে হবে।


কীভাবে আপনি ইনকাম ট্যাক্স ফরম বা ফাইল পূরণ করবেন? 

আপনি নিজেই অনলাইনে http://nbr.gov.bd/form/income-tax/eng লিংকের মাধ্যমে আপনার ইনকাম ট্যাক্স-এর আবেদন করতে পারবেন। এখানেই ফরম বা ফাইল পাওয়া যাবে।


অনলাইনে  টিন সার্টিফিকেট করতে কী কী লাগবে?

টিন সার্টিফিকেট করার জন্য প্রয়োজন হবে:

১. জাতীয় পরিচয়পত্র

২. মোবাইল নাম্বার ও

৩. কোম্পানীর ক্ষেত্রে আরজেএসসি নাম্বার ইত্যাদি।

অনলাইনে আয়কর নিবন্ধন করার জন্য এই তথ্যগুলো লাগবে।


টিন কীভাবে করবেন?

নতুন নিয়ম অনুসারে আয়কর নিবন্ধনধারীকে প্রথমেই আয়কর ওয়েবসাইটে একটি অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে হবে। আয়কর ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে আয়কর সাইটে লগইন করে টিন সার্টিফিকেটের জন্য আবেদনপূর্বক টিন সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে হবে।


আবেদন সম্পন্ন হলে এখান থেকে ইনকাম ট্যাক্স সার্টিফিকেট ডাউনলোড করতে পারবেন। এ জন্য নিচের কাজগুলো করুন।
 

প্রথমে https://www.incometax.gov.bd/ প্রবেশ করুন। আয়কর ওয়েবসাইটের হোম পেজ ওপেন হবে। এখানে মেনু থেকে রেজিস্টার বাটন ক্লিক করুন। ডিসপ্লেতে রেজিস্টার ফরম ওপেন হলে শূন্য ঘরগুলো পূরণ করে শেষে রেজিস্টার বাটন ক্লিক করুন। রেজিস্টার ফরমে দেয়া আপনার মোবাইল নাম্বারে তাৎক্ষণিকভাবে একটি কোড চলে যাবে এবং পর্দায় প্রদর্শিত ডায়ালগ বক্সে মোবাইলে পাঠানো কোডটি প্রদান করুন। এরপর রেজিস্টার বাটন ক্লিক করলেই টিন আবেদন করার ফরম দেখতে পাবেন এবং পর্দায় ‘ওয়েলকাম টু ট্যাক্সপেয়ার আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার রেজিস্ট্রেশন/ রি-রেজিস্ট্রেশন’ মেসেজ দেখা যাবে।


অর্থাৎ, আয়কর সাইটে আপনার অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়ে গেছে। এখন লগইন অবস্থায় টিন সার্টিফিকেট আবেদন করে তাৎক্ষণিকভাবে আয়কর সনদ ডাউনলোড করতে পারবেন।


নাগরিকের ক্ষেত্রে টিন সার্টিফিকেট রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম

আপনি যদি ব্যক্তিগতভাবে টিন সার্টিফিকেট করেন অর্থাৎ আপনার যদি কোনো কোম্পানি না থাকে, তাহলে ওপরের নিয়মে আয়কর ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করুন। এপর লগইন করে বাম পাশের মেনুতে দেখুন টিন অ্যাপ্লিকেশন একটি মেনু রয়েছে। এখানেই ক্লিক করুন।


টিন করার জন্য রেজিস্ট্রেশন/রি-রেজিস্ট্রেশন ফরম ওপেন হবে। ফরমে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রবেশ করে গো টু নেক্সট বাটন ক্লিক করুন। মনে রাখবেন, আপনার বেসিক ইনফরমেশন ভুল দিলে ফরম সাবমিট না-ও হতে পারে। তাই সঠিকভাবে তথ্য পূরণ করুন।


এবার আপনার সামনে ফাইনাল প্রিভিউ পেজ ওপেন হবে। এখানে সব তথ্য ভালোভাবে চেক করে নিন। যদি সব তথ্য সঠিক থাকে, তাহলে ফাইনাল প্রিভিউর নিচে চেক বক্সে টিক চিহ্ন দিন।


এরপর সাবমিট অ্যাপ্লিকেশন বাটন ক্লিক করুন। দেখবেন আপনার টিন সার্টিফিকেট তৈরি হয়ে গেছে। এখন তা ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিন।

টিন সার্টিফিকেটের ন্যূনতম ট্যাক্স কত?

ন্যূনতম ট্যাক্স ৫০০০ টাকা (ঢাকা ও চট্টগ্রাম), ৪০০০ টাকা (অন্যান্য সিটি করপোরেশন), ৩০০০ টাকা সিটি করপোরেশন ব্যতীত। আর ২০২৪ সাল পর্যন্ত ফ্রিল্যান্সিং ইনকামের কোনো ট্যাক্স দিতে হবে না।


ই-টিন সার্টিফিকেট হেল্পলাইন

e-TIN সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা বা পরামর্শের জন্য টিন হট-লাইনে যোগাযোগ করতে পারেন। টিন হট-লাইন নাম্বার হচ্ছে 09611-777111 কিংবা 333 কল করেও যোগাযোগ করতে পারেন।

ই-মেইলও করতে পারেন info@incometax.gov.bd ঠিকানায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *