৬২ আসনে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে । যাদের মধ্যে ৫৮ জনই আওয়ামী লীগের নেতা। দলের মনোনয়ন প্রক্রিয়া থেকে বাদ হওয়ার পরেও দলের বাইরে গিয়ে ভোট করে নির্বাচিত হয়েছেন তারা।
তবে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত হলেও সংসদে সরকারবিরোধী অবস্থান নিতে আগ্রহী নন একাধিক সংসদ সদস্য। কারণ এতে দলে এবং স্থানীয় পর্যায়ে রাজনীতির মাঠে তাদের গুরুত্ব কমে যাবে, প্রভাবও কমবে। বরং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংসদে থাকলে নানাভাবে লাভবান হতে পারবেন। তাই বিজয়ী সংসদ সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন।
বিএনপি-জামায়াতসহ তাদের বলয়ের বিরোধী রাজনৈতিক দলের বর্জনের মধ্যে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২৩ আসনে বিজয়ী হয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এর পর ১০ জানুয়ারি সংসদ সদস্যরা শপথ নেন।
সেদিনই আওয়ামী লীগের সংসদীয় দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা নির্বাচিত করে। এরপর দিন শপথ নেয় নতুন মন্ত্রিসভা।
নির্বাচনে দল হিসাবে আওয়ামী লীগের পর এবার সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। ১১ আসনে জয়ী হয়েছে তারা। এর বাইরে ৬২ আসনে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এ ছাড়া বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ এবং বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি থেকে একজন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এবার।
তবে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা রয়েই গেছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা তাদের ৬২ আসনের বিপরীতে সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন পাবে ১০টি।
এর সঙ্গে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ এবং বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি যুক্ত হলে তাদের সংরক্ষিত আসন দাঁড়াবে ১১টি। এসব আসনে কীভাবে প্রার্থী ঠিক করা হবে, তাও এখন বড় প্রশ্ন।
ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের কাছে চিঠি দিয়ে সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনে তাদের অবস্থান জানতে চাওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের বেশি ভাগই আওয়ামী লীগের পদধারী হলেও আপাতত তাদের সংসদীয় দলে নেওয়া হবে না। তাই স্বতন্ত্রদের আলাদা জোট গঠনের মাধ্যমেই সংসদীয় কার্যক্রমে অংশ নিতে হবে।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক একজন সদস্যকে স্বতন্ত্র জোটের সংসদীয় দলের নেতা এবং যুবলীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্যকে স্বতন্ত্র জোটের সংসদীয় দলের উপনেতা করার বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। স্বতন্ত্র এই জোটের নেতাই যে বিরোধীদলীয় নেতারা মর্যাদা পাবেন, এ বিষয়টিও নিশ্চিত নয়।
৩০ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসবে। নতুন সংসদের অধিবেশন উপলক্ষ্যে সংসদ কক্ষে সংসদ সদস্যদের আসনবিন্যাসের কাজ প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে। সেখানে স্বতন্ত্র সদস্যদের আসন রয়েছে জাতীয় পার্টির সদস্যদের পাশে। বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র সদস্যের জন্য বিরোধী শিবিরে থাকা সামনের সারির আসন বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত একাধিক সংসদ সদস্য জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরই সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন, স্বতন্ত্র সদস্যদের জোটগতভাবে সংসদীয় দল গঠন এবং বিরোধী দলের ভূমিকায় স্বতন্ত্ররা থাকবেন কিনা— এসব বিষয় স্পষ্ট হবে।
ঢাকা-১৮ আসন থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. খসরু চৌধুরী বলেন, আমি আওয়ামী পরিবারের লোক। বিরোধী দলে যাওয়ার ইচ্ছা নেই। তবে নেত্রী (শেখ হাসিনা) যে সিদ্ধান্ত দেন, আমি তাই মেনে নেব।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৬২ স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের মধ্যে ৪৩ জন আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করেন।
আর বাকি তিনজনের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসন থেকে নির্বাচিত এসএকে একরামুজ্জামান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ছিলেন। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচন করেন তিনি এবং জয়ী হন।
সিলেট-৫ আসন থেকে নির্বাচিত হন ফুলতলীর পীরের ছেলে মোহাম্মদ হুছামউদ্দিন চৌধুরী। নীলফামারী-৪ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এ আসনে লাঙল না পেয়ে দলের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয়ী হন জেলা জাতীয় পার্টির বহিষ্কৃত সহসভাপতি সিদ্দিকুল আলম। যাদের বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে সংসদীয় কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে চান।
এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম এমপি শনিবার আমাদেরকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের সঙ্গে আজ (রোববার) বসবেন। এ বৈঠকে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা আসতে পারে।