জ্বালানি তেল ব্যবস্থাপনা সাশ্রয়ী ও টেকসই করতে এসপিএম (সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং) কার্যকরি অবদান রাখবে। প্রকল্পটি চালু হলে বছরে ১ হাজার কোটি টাকা খরচ সাশ্রয় হবে। – বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন।
কক্সবাজারের মহেশখালিতে নির্মাণাধীন ‘ইন্সটলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি বৃহস্পতিবার পরিদর্শনকালে এসব কথা বলেন তিনি। আজ শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।
তিনি বলেন, এতদিন আমদানি করা জ্বালানি তেল বড় জাহাজ থেকে লাইটার জাহাজে করে রিফাইনারি ট্যাংকে পৌঁছাতে সময় লাগত লাগত এগারো-বারো দিন। এসপিএম চালু হলে সমপরিমাণ তেল পরিবহণে সময় লাগবে মাত্র ৪৮ ঘণ্টা। এতে বছরে সাশ্রয় হবে কমপক্ষে ১ হাজার কোটি টাকা, কমে যাবে সিস্টেম লস।
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রকল্পের আওতায় ২২০ কিলোমিটার পাইপলাইনে পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে ৬টি বিশালাকার স্টোরেজ ট্যাঙ্ক; যা বাংলাদেশের তেল মজুদ সক্ষমতাকে নিয়ে যাবে নতুন উচ্চতায়। প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে জি-টু-জি ভিত্তিতে বাস্তবায়নাধীন সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং পাইপ লাইন দিয়ে স্বল্প সময়ে ,সাশ্রয়ী খরচ ও নিরাপদে জ্বালানি তেল (ক্রুড ওয়েল ও ফিনিসড প্রডাক্ট) পরিবহন সহজ হবে। বাংলাদেশের জ্বালানিখাতে যুগান্তকারী মেগাপ্রকল্প এসপিএম। ভৌত অবকাঠামোর নির্মাণ শেষ, এখন ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। আশা করছি বছরের মাঝামাঝি থেকে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হবে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র বলছে, বাংলাদেশে জ্বালানি তেল উৎপাদন করে না, গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে প্রাপ্ত কনডেনসেট থেকে পেট্রোল এবং ৪০ শতাংশের মতো অকটেন যোগান আসে। বিপুল পরিমাণ ডিজেলসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি করে যোগান দেওয়া হয়। বিপুল পরিমাণ জ্বালানি আমদানি করা হয় নদী পথে। কিন্তু নদীবন্দরগুলোতে নাব্যতার অভাবে বড় জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারে না। গভীর সমুদ্রে নোঙ্গর করে জ্বালানি তেলবাহী বড় জাহাজ। সেখান থেকে লাইটার বা ছোট জাহাজে তেল আনা হয় বিপিসির ডিপোতে। বিপিসি থেকে আবার জাহাজে করে তেল দেশের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
বড় জাহাজ থেকে তেল খালাস করতে অন্তত ১১ দিন সময় লাগে। কখনো কখনো এই তেল খালাস করতে আরো সময় লেগে যায়। বিশেষ করে সমুদ্র উত্তাল হয়ে পড়লে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। জাহাজ মালিকদের সঙ্গে চুক্তির চেয়ে বেশি সময় লাগায় কখনো কখনো জরিমানা গুনতে হয়। এসপিএম প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ২৮ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় ডিজেল ও ক্রড অয়েল খালাস করা সম্ভব হবে। এতে একদিকে যেমন জাহাজ ভাড়া কমে আসবে, অন্যদিকে তেল পরিবহনে সিস্টেম লস ও নানা ধরনের চুরিও প্রতিরোধ হবে।
জাহাজ থেকে তেল খালাসের জটিলতা দূর করতে নেওয়া হয় এসপিএম উইথ ডাবল পাইপলাইন প্রকল্প। এসপিএম মহেশখালী দ্বীপের পশ্চিম পাশে বঙ্গোপসাগরে স্থাপন করা হবে। বিদেশ থেকে বড় জাহাজে আমদানি করা জ্বালানি তেল পাইপলাইনের মাধ্যমে মহেশখালী এলাকায় স্থাপিত স্টোরেজ ট্যাংকে জমা হবে। সেখান থেকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ডিপো, ইস্টার্ন রিফাইনারির স্টোরেজ ট্যাংক ছাড়াও প্রয়োজনে তেল বিপণন কম্পানির বিভিন্ন স্টোরেজ ট্যাংকে জমা করা যাবে।