কাদের ওপর জাকাত ফরজ

jakat-image-collected
Spread the love

দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে জাকাত ব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিক করার গুরুত্ব অপরিসীম। সব বিত্তবান মুসলিম নর-নারীর ওপর সঠিকভাবে হিসাব করে জাকাত দেওয়া ফরজ।

ইসলামের অন্যান্য মৌলিক বিধানের মতো জাকাত অস্বীকার করা কুফরি এবং সঠিকভাবে আদায় না করা ফাসেকি ও কবিরা গুনাহ। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা কোরো ও জাকাত দাও, তোমরা উত্তম কাজের যা কিছু আগে পাঠাবে আল্লাহর কাছে তা পাবে, তোমরা যা করো আল্লাহ এসব দেখেন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১১০)

যে বছরের যে দিনটিতে নিসাব পরিমাণ অর্থ সম্পদের মালিক হবে, হিজরি সনের হিসাবে পরবর্তী সনের সেই দিনটি তার জাকাত প্রদানের সময় বা বর্ষপূর্তি। বছর পূর্ণ হলেই জাকাত প্রদান করা ফরজ। রমজানের অপেক্ষা করা ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা এর মধ্যে মারা গেলে জাকাত খেলাফি গণ্য হয়ে পরকালের শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘…যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না তাদের মর্মন্তুদ শাস্তির সুসংবাদ দাও।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৩৪)

জাকাতের অন্যতম উদ্দেশ্য জনগণকে অভাবমুক্ত করে সচ্ছল বানানো। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে জাকাতের ভূমিকা অপরিসীম। আর অভাব দূর হলে অপরাধ অর্ধেক হ্রাস পাবে। জাতীয় চরিত্র ও স্বভাব ভালো হলে বাকি অর্ধেক অপরাধও দূর হবে এবং সমাজ হবে শান্তিপূর্ণ ও কল্যাণময়। ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের সম্পদ থেকে সদকা গ্রহণ করুন, এর মাধ্যমে আপনি তাদের পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন, আপনি তাদের জন্য দোয়া করবেন, আপনার দোয়া তাদের জন্য স্বস্তিকর, আল্লাহ সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১০৩)

যাদের ধনী হওয়ার সময় মনে নেই তারা রমজানের কোনো একটি দিনকে জাকাত প্রদানের সময় নির্ধারণ করে জাকাত দেবে। তারাও ওই দিনই সম্পদের হিসাবে বসবেন। তখন মোট অর্থ-সম্পদে কিছু অঙ্ক প্রবেশ করলে তা জাকাতযোগ্য হবে আর কিছু টাকা বের হয়ে গেলে তা জাকাতের হিসাবে আসবে না। সাহিবে নিসাব অর্থাৎ হিজরি বছর শেষে কারো মালিকানায় সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা এর আনুমানিক মূল্য সাড়ে চার লাখ টাকা অথবা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা বা এর আনুমানিক মূল্য ৪৫-৫০ হাজার টাকা বা সমমূল্যের ব্যবসা পণ্য থাকলে মোটের ওপর শতকরা ২.৫ ভাগ জাকাত দিতে হবে।

গরিবদের উপকারের কথা বিবেচনা করে রুপার নিসাব ধরে জাকাত দেওয়া ইসলামের মূলনীতি ও জাকাতের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই ফিকাহ বিশেষজ্ঞরা রুপার হিসাবে জাকাত দিতে বলেছেন। রুপার হিসাবে নগদ অর্থ দিয়ে এমনভাবে জাকাত দেওয়া উচিত, যেন গ্রহীতা নিজের প্রয়োজন পূরণ করতে পারে। খাদ্য ও ওষুধ ক্রয়, ঘর নির্মাণ, সন্তানের লেখাপড়ার খরচ কিংবা মেয়ে বিয়ে দেওয়াসহ অনেক জরুরি বিষয় একাধিক শাড়ি বা লুঙ্গি দেওয়ার চেয়ে অনেক উত্তম।

পবিত্র কোরআনে জাকাত দেওয়ার ক্ষেত্রে তালিবে ইলম ও আল্লাহর পথে নিবেদিত ব্যক্তিদের প্রাধান্য দিতে বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তা ওই সব দরিদ্র মানুষের প্রাপ্য, যারা আল্লাহ তাআলার পথে এমনভাবে আবদ্ধ যে তারা জমিনে ঘুরতে পারে না, তাদের অমুখাপেক্ষী ভাব দেখে অজ্ঞ লোকেরা তাদের অভাবমুক্ত মনে করে, আপনি তাদের অবয়ব দেখে চিনবেন, তারা মানুষের কাছে হাত পেতে চায় না, তোমরা যা দান করো আল্লাহ সেই সম্পর্কে সবিশেষ অবগত।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৩)

জাকাত গ্রহণের ক্ষেত্রে দরিদ্র আত্মীয়-স্বজন যারা নিসাবের মালিক নন তারা অগ্রাধিকার পাবে। এ ক্ষেত্রে পিতা-মাতা ও তদূর্ধ্ব এবং পুত্র-কন্যা ও অধস্তন আত্মীয়দের জাকাত দেওয়া যাবে না। এরপর যারা আল্লাহ তাআলার পথে কাজ করেন এবং প্রতিবেশীরা অগ্রাধিকার পাবে।

ঈমান ও নামাজের দাওয়াতের মতো জাকাতের দাওয়াত দেওয়া মুসলিমদের কর্তব্য। সৎ ও দক্ষ নেতৃত্বের অধীনে জাকাত ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে কয়েক বছর চললে এর সুফল পাওয়া যাবে। এভাবে চললে দেশ ও সমাজ সচ্ছল হবে এবং জাকাতগ্রহীতা খুঁজতে দ্বিনদার বিত্তবানদের বিজ্ঞাপন দেওয়া লাগতে পারে। তাই আমানতদার ও দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে জাকাত ও দানের বিশাল তহবিল গঠন করা মুসলিম উম্মাহর প্রধান কর্তব্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *