বাংলাদেশ তৈরি পোশাক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান শিল্পে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন । তিনি বলেছেন, ‘শিল্পে গ্যাসের দাম ১৪ থেকে ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, যা আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। গ্যাসের এই দর নিয়ে আমরা চিন্তিত। এটা নিয়ে আমরা সরকারের সঙ্গে কথা বলব। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যয় বৃদ্ধির এই ভার বহনের সক্ষমতা শিল্প খাতের নেই।’
গ্যাসের মূল্য সমন্বয়ে তিনি গ্যাস আমদানির ওপর ভ্যাট ও ট্যাক্স প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘গ্যাস সঞ্চালনে সিস্টেম লস কমিয়ে আনুন, অবৈধ সংযোগগুলো বন্ধ করে গ্যাসের মূল্য সমন্বয় করুন। শিল্পের জন্য গ্যাস ও বিদ্যুতের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করুন। সেই সঙ্গে শিল্পে গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করুন।’ তিনি বলেন, পাশাপাশি এলএনজি আমদানিতে দীর্ঘমেয়াদি কন্ট্রাক্টের বিষয়ে সরকারের গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে উল্লেখ করে ফারুক হাসান বলেন, ‘এর প্রভাব পড়েছে আমাদের পোশাকশিল্পে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানিসহ প্রধান বাজারগুলোতে প্রবৃদ্ধি যে হ্রাস পাচ্ছে, তা দৃশ্যমান। পোশাকের অর্ডার কমিয়ে দিয়েছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। আমরা দেখছি যে আমদানিকরা একসঙ্গে বড় অর্ডার না দিয়ে ছোট স্লটে অর্ডার দিচ্ছেন। ক্রেতারা হঠাৎ অর্ডার বাতিল করছেন, আবার অনেক ক্রেতা ডেফার্ড পেমেন্টের দিকে ঝুঁকেছেন। আমাদের জানা মতে, এ মুহূর্তে পূর্ণ সক্ষমতা ব্যবহার করে কারখানা চালানোর মতো কোনো অর্ডার কোনো কারখানারই কাছে নেই।’
২০৩০ সাল নাগাদ পোশাকশিল্পে ১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও চলতি ২০২৩ সালে পোশাকের বাজার বাড়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা। তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি বিদ্যমান বাজার ধরে রাখার। বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতেও রপ্তানির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে মার্কেট ও পণ্য বৈচিত্র্যময় করার কাজ করছি। এর সুফলও পাচ্ছি। ১২ বছর আগেও যেখানে মোট রপ্তানির ৬.৮৮ শতাংশ অপ্রচলিত বাজারে, সেখানে বর্তমানে ১৬ শতাংশের বেশি।’
চীন থেকে গত কয়েক বছরে অনেক ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে এসেছে দাবি করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘আগামী আট বছরে এর পরিমাণ আরো বাড়বে। চীন যেহেতু পরিবেশগত কারণে টেক্সটাইল থেকে সরে আসছে, ফলে সংগত কারণেই সেগুলো বাংলাদেশে আসবে বলে আমরা ধারণা করছি। আমরা এই সুযোগগুলো গ্রহণ করতে চাই। তবে এ ক্ষেত্রে নন-কটন বা ম্যান মেইড ফাইবার নিয়ে যারা কাজ করছে, তাদের প্রণোদনা দিলে রেডি মার্কেট ধরা সম্ভব হবে।’ তিনি বলেন, টেকসই হওয়ার কারণে বিশ্ববাজারে ক্রেতারা এখন নন-কটন পোশাক পণ্যের দিকে ঝুঁকছেন। টেক্সটাইল খাতের মধ্যে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি খাত হচ্ছে ম্যান-মেইড ফাইবারভিত্তিক ইয়ার্ন ও ফ্যাব্রিকস; যেমন—পলিয়েস্টার, ভিনকস, স্প্যানডেক্স ও মেলাঞ্জ। বিশ্ববাজারে কটন বস্ত্রের শেয়ার এবং পোশাকের ব্যবহার মাত্র ২৬ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশের রপ্তানীকৃত তৈরি পোশাকের ৭৫ শতাংশ কটন পণ্যগুলোতে আবদ্ধ।
ফারুক হাসান বলেন, ‘বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডাব্লিউটিও) ২০২১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের শেয়ার মাত্র ৬.৪০ শতাংশ। এ বাজারেও নিজের শেয়ার আরো বাড়ানোর সুযোগ আছে বাংলাদেশের। এ সুযোগ গ্রহণের জন্য এবং শিল্পের প্রবৃদ্ধি টেকসই করার লক্ষ্যে পোশাক খাতে পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ, বিশেষ করে নন-কটন এবং বাজার বৈচিত্র্যকরণের ওপর আমরা জোর দিয়েছি। উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের সব দেশেই পোশাক রপ্তানি করার পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি।’