কোভিড-১৯ বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য এবং নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে করণীয়

Covid19-virus-collected
Spread the love

মানসিক স্বাস্থ্য কীভাবে সুরক্ষিত রাখবেন

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) রোগ ছড়িয়ে পড়ার ফলে বাবা-মা এবং শিশুরা বড় ধরনের ঝুঁকির সম্মুখিন হচ্ছে। পরিবারের প্রত্যেকের জন্যই স্কুল বন্ধ ও শারীরিক দূরত্বের বিষয়গুলো মেনে নেয়া বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

করোনভাইরাস (কোভিড -১৯) রোগ ছড়িয়ে পড়ার সময় কিশোর-কিশোরী এবং তাদের বাবা-মা কীভাবে নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে পারেন?

বাবা-মা প্রথম যে কাজটি করতে পারে তা হলো তারা [কিশোর-কিশোরীরা] যে উদ্বিগ্ন বোধ করছে সে বিষয়টিকে স্বাভাবিক করে তোলা। অনেক কিশোর-কিশোরীর মধ্যে এক ধরনের ভুল ধারণা রয়েছে যে, উদ্বেগ সব সময় মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ। তবে, মনোবিজ্ঞানীরা অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিলেন যে, উদ্বেগ একটি স্বাভাবিক এবং স্বাস্থ্যকর বিষয় যা বিভিন্ন ধরনের হুমকির বিষয়ে আমাদের সতর্ক করে এবং নিজের সুরক্ষা নিতে সহায়তা করে। সুতরাং আপনি যদি বলেন, “তুমি যে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছো সেটা সঠিক। কিছুটা উদ্বেগের কারন তো এখন অবশ্যই আছে। বিষয়টি এইভাবেই ভাবা উচিত। এখনই যে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত, উদ্বেগ তা নিতে সহায়তা করবে।” আর এধরনের ভাবনা কিশোর-কিশোরীদের জন্য খুবই সহায়ক। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা অনুশীলন করা, ঘন ঘন হাত ধোয়া এবং নিজের মুখ স্পর্শ না করা – এই ধরনের উদ্বেগ এখনই যা করা দরকার তোমাকে সেটি করতে সহায়তা করবে। এতে করে তুমি আরও সুরক্ষিত বোধ করবে। সুতরাং এই কাজটি আমরা করতে পারি।

আর একটা কাজ যেটা আমরা করতে পারি সেটা হলো তারা যেন বাইরের দিকে নজর দেয় সেক্ষেত্রে আমরা তাদেরকে সাহায্য করতে পারি। এক্ষেত্রে তাদের একথা বলুন, “শোনো, আমি জানি তোমরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশংকায় সত্যিকার অর্থেই বেশ উদ্বিগ্ন। তবে, আমরা কেন তোমাদের নিজের মুখ ধোয়া, বাড়ির কাছাকাছি থাকা ইত্যাদি করতে বলছি? এর কারন হলো আমরা এভাবেই আমাদের কমিউনিটির সদস্যদের যত্ম নিই। আমরা আমাদের আশেপাশের মানুষজনকে নিয়ে এভাবেই চিন্তা করি।”  

এবং তারপরে তাদেরকে আরও কিছু কাজ করতে দিন যা তাদের জন্য সহায়ক হতে পারে: হয়তো অভাবগ্রস্থ মানুষদের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া বা তাদের জন্য কেনাকাটা করতে যাওয়া বা নিজেদের কমিউনিটির কোন এলাকার মানুষের সহায়তা দরকার তা নির্ধারণ করা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আশেপাশের মানুষদের সহায়তা করার জন্য কাজ করা। করোনার মধ্যে অন্যদের সেবা করার উপায় খুঁজে পাবার বিষয়টি তরুণদের মধ্যে আরও ভাল অনুভূতি তৈরিতে সহায়তা করবে।

তারপর তৃতীয় যে জিনিসটি করা দরকার তা হলো উদ্বেগ থেকে বেরিয়ে আসতে তাদেরকে অন্যান্য বিষয়ের দিকে ধাবিত করতে হবে। মনোবিজ্ঞানীরা যা জানেন তা হচ্ছে যখন আমরা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার মধ্যে থাকি – এটি অবশ্যই একটি দীর্ঘকালীন সমস্যা যা কিছুকাল চলতে থাকে – তখন সমস্যাটিকে দুটি ভাগে ভাগ করা বেশ সুবিধাজনক: (১) যেসব বিষয়ে আমি কিছু একটা করতে পারি; এবং (২) যে সব বিষয়ে আমি কিছুই করতে পারি না। এখন সেই দ্বিতীয় ভাগে অনেক কিছু ঘটতে চলেছে, যেখানে শিশু কিশোরদের বেশ কিছু সময়ের জন্য হলেও কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে বাঁচতে হবে।

গবেষকরা জানান, দ্বিতীয় অংশটিকে মোকাবেলা করার জন্য ইতিবাচক বিভ্রান্তি খুঁজে পাওয়ার বিষয়টি আমাদের সহায়তা করতে পারে: আমরা আমাদের বাড়ির কাজ করি, আমরা আমাদের পছন্দসই সিনেমা দেখি, আমরা বিছানায় শুয়ে থেকে একটি উপন্যাস পড়ি। এখনকার সময়ে এটি যথেষ্ট উপযুক্ত কৌশল। করোনভাইরাস এবং উদ্বেগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় হিসাবে সম্ভবত অনেক কিছুই বলা যায়, এবং অন্যভাবে করোনভাইরাস এবং উদ্বেগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় হিসাবে আবার অনেক কিছুই বলা যায় না। সঠিক ভারসাম্য খুঁজে পেতে শিশু-কিশোরদের সহায়তা করা এক্ষেত্রে একটি বড় পার্থক্য নিয়ে আসবে।

বিভ্রান্তিবশত, ইদানিংকালে অনেক কিশোর-কিশোরীই নিজেদেরকে বিভিন্ন ডিভাইসের স্ক্রীন-এর মধ্যে আবদ্ধ রাখছে। বাবা-মা এবং কিশোর-কিশোরীরা এটিকে সর্ব্বোত্তমভাবে কীভাবে মোকাবেলা করতে পারে? 

আমি একজন কিশোর বা কিশোরীর খুব সামনে এসে বলব, “ঠিক আছে, তুমি এবং আমি দুজনেই জানি যে, তোমার হাতে এখন অনেক সময় আছে। কিন্তু তুমি এবং আমি দুজনেই এও জানি যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অযথা অলস সময় কাটানোর কোনও অর্থ হতে পারে না। এটি স্বাস্থ্যকরও নয়। এটি ভালো কিছু নয় এবং এটি তোমার উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে তুমি বিনামূল্যে ব্যবহার করছো বলেই যে এটি ভাল তা নয়। সুতরাং আসল কথা হলো তোমাকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না বা ক্লাশ করার জন্য সময়ও ব্যয় করতে হচ্ছে না। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, সে সব সময় তোমাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জন্য ব্যয় করতে হবে।” তবে, সবকিছু স্বীকার করে নিয়ে আমার মনে হয় আপনি সরাসরি শুধু বলবেন যে, স্বাভাবিকভাবেই স্কুলে না যাওয়ার জন্য যে সময় বেঁচে যাচ্ছে তার সবটুকুই অনলাইনে ব্যবহারের কোনও সুযোগ নেই। 

এরপর কিশোর-কিশোরীকে প্রশ্ন করুন, “আমরা বিষয়টিকে কীভাবে মোকাবেলা করবো? এক্ষেত্রে আমাদের পরিকল্পনাই বা কি হবে? নতুন স্বাভাবিক (নিউ নর্মাল) বা নতুন স্বল্পমেয়াদী স্বাভাবিক অবস্থায় তুমি সাধারণতঃ কী প্রস্তাব করবে? তুমি যেভাবে অভ্যস্ত সেভাবে আর তোমার সময়টিকে কাঠামোবদ্ধ করা যাচ্ছে না। তাই একটা কাঠামোর চিন্তা কর এবং তোমার মনে যে কাঠামো আছে তা আমাকে দেখাও। তারপর আমরা বিষয়টি নিয়ে একসাথে ভাবতে পারি।”

স্বাভাবিকতা বজায় রাখার জন্য অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের জন্য কেমন কাঠামো তৈরি করবে?

শিশু কিশোরদের জন্য একটা সময়সূচী দরকার। খুব দ্রুততার সাথে আমাদের সকলকে এমন একটা সময়সূচী বানাতে হবে যা তাদের সময়কে দিনের পর দিন কার্যকরভাবে ব্যয় করতে সাহায্য করবে। এবং তাই আমি দৃঢ়ভাবে সুপারিশ করব যে, বাবা-মায়েরা এক্ষেত্রে দিনের একটি সময়সূচি আছে কিনা তা নিশ্চিত করবেন। আর এ সময়সূচিতে সময়টা কীভাবে ব্যয় করা হবে তার পরিকল্পনা থাকবে। সময়সূচির এই পরিকল্পনার মধ্যে খেলার সময়ও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে যেখানে তাদের ইচ্ছানুযায়ী ফোনে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। তবে এই সময়সূচিতে প্রযুক্তি-মুক্ত সময়, রাতের খাবার তৈরিতে সাহায্যের জন্য আলাদা সময়, বাইরে যাবার জন্য আলাদা সময় থাকা উচিত। এছাড়াও, এরকম একটা পরিকল্পিত সময়সূচী তাদেরকে বুঝতে সাহায্য করবে কখন তারা পড়াশোনা করবে এবং কখন তারা খেলবে অথবা নিজের মত সময় কাটাবে। এই দিকনির্দেশনা তাদের জন্য বড় ধরনের স্বস্তি বয়ে নিয়ে আসবে।

আমি ১০ বা ১১ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের জন্য বলব, বাবা-মার একটি কাঠামো তৈরি করা উচিত। তারপরে এটি নিয়ে তাদের সন্তানদের সাথে আলোচনা করা উচিত এবং আলোচনায় এমন কোনও প্রতিক্রিয়া কিংবা মতামত থাকতে পারে যা কাঠামোটিকে আরও উন্নত করতে পারে।

এগারো এবং তার চেয়েও বেশি বয়সী শিশুদের জন্য, আমি বাচ্চাকে এটির খসড়া সময়সূচী তৈরি করতে বলবো – এবং সময়সূচীতে যেসব বিষয় থাকা উচিত সে সম্পর্কে তাকে ধারণা দিব, এবং তারপর সে যা তৈরি করলো সেটা নিয়ে কাজ করবো।

আরও ছোট শিশুদের জন্য একটি কাঠামো তৈরি করছেন এমন বাবা-মার জন্য আপনার পরামর্শ কী?

ছোট শিশুরা আসলে দিনের বেলা ক্লাসে বসে থাকে এবং তাদের চারপাশের অনেক সহপাঠীর দুষ্টামি এবং বিরক্তি সহ্য করে। অথচ তারা যখন বাড়িতে থাকে তখন তাদের এসব সহ্য করতে হয় না। আমি মনে করি বিষয়টি আমাদের বুঝতে হবে। আমি মনে করি না যে, তাদের বাড়িতে থেকে নির্দিষ্ট বিষয়ে কাজ করার দক্ষতাকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখা উচিত।

একানে এটি বলা দরকার যে, প্রত্যেক পরিবার তাদের শিশুকে সবচেয়ে ভাল জানেন এবং কে তাদেরকে তদারকি করছে তার উপর নির্ভর করে তাদের আদর্শ কি হবে। এছাড়াও, তাদের দিনের সময়সূচী তৈরি করতে হবে এমন ভাবে যাতে করে যদি কোন কিছু ঘটেও যায় তবে তার আগেই সকল কাজ যেমন, স্কুলের সকল কাজ, অন্যান্য সকল কাজ, যে কাজগুলো তাদের করতে হবে তা শেষ হয়ে যায়।

অনেক পরিবার মনে করতে পারে যে, দিনটি কিছুটা পরে শুরু করা ভাল হবে। আরেকটু ঘুমিয়ে নেয়া, একসাথে দীর্ঘ সময় ধরে সকালের নাস্তা করা এবং তারপরে সকাল ১০টা বা ১১টার দিকে দিনের অন্যান্য কাজ করা ভাল। প্রতিটি পরিবার তাদের নিজের মতো করে এটি করতে পারে। আমি এমন কিছু যুক্ত করতে চাই যা অন্য অনেকে বলতে নাও চাইতে পারে:  আমরা এখন মহামারীতে আটকে আছি, সুতরাং আপনি যেভাবে উপভোগ করতে পারবেন – আপনার সেটাই করা উচিত। যদি এর অর্থ এমনটি হয় যে, আপনি পরিবারের সকলের সকালের নাস্তার জন্য একটি পছন্দের খাবার তৈরি করছেন এবং এটি এমন একটি বিষয় যা স্কুল চলাকালীন কখনও সম্ভব হয়নি এবং এটি এমন কিছু যা প্রত্যেককে খুশি করে তোলে, তবে অবশ্যই সেটা করুন।

একটি সময়সূচি দিয়ে চেষ্টা করুন, বা পরিবারের জন্য এক সপ্তাহের একটি অস্থায়ী সময়সূচি দিয়ে চেষ্টা করুন এবং তারপরে সপ্তাহের শেষে এটি পর্যালোচনা করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *