মাথাব্যথা একটি পরিচিত স্বাস্থ্য সমস্যা। অনেক সময় আমরা এটিকে গুরুত্ব দিই না। কিছু মাথাব্যথা জটিল রোগের উপসর্গ। গুরুত্ব না দিলে এটি মারাত্মক বিপদের কারণ হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) হিসাব মতে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক বয়স্ক লোক বছরে একবার মাথা ব্যথা অনুভব করে। এ নিয়ে মাথা ব্যথার কোনো কারণ নেই। শতকরা ৯০ভাগের বেশি মাথাব্যথা (benign) জটিলতাহীন বা ক্ষতিকর নয়।
২০০এর বেশি ধরনের মাথাব্যথা আছে, যার বেশিরভাগই ক্ষতিকর নয়, কিন্তু কিছু কিছু মাথা ব্যথা আবার মারাত্মক ও জীবনের ঝুকিপূর্ণ।
কোন মাথাব্যথা বিপজ্জনক এবং এতে করণীয় কী সেই সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল বরিশালের সাবেক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. রবিউল ইসলাম।
International Headache Society মাথাব্যথাকে দুটি গ্রুপে ভাগ করেছেন।
Primary মাথাব্যথা ও Secondary মাথাব্যথা।
Primary Headache : সকল মাথাব্যথার শতকরা ৯০ ভাগই Primary মাথাব্যথা (Headache), যা সাধারণত জটিলতাহীন এবং বার বার হয়। অদ্যাবধি Primary মাথা ব্যথার কোনো কারণ জানা যায়নি,বা অন্য কোন রোগ বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গাঠনিক সমস্যার জন্য সৃষ্টি নয়।
Common Primary Headache গুলি হলো- Tension type headache, Migraine, Cluster headache, Chronic
daily headache.
অন্যান্য Primary Headache খুবই কম উপলব্ধি হয়, যেগুলো হলো-
Primary stabbing headache, Primary cough headache, Primary exertional headache, Primary sex
headache
Primaryheadache-এ প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য বিরক্তিকর মাথা ব্যথা হতে পারে, তবে এগুলো মারাত্মক নয়।
Secondary Headache : মাথা বা ঘাড়ের রোগের কারণে হয়। যেমন- সংক্রমণ (infection), মাথায় আঘাত পেলে (head injury), মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা মস্তিষ্কের টিউমার ইত্যাদি।
কিছু Secondary headache আবার মারাত্মক নয়। যেমন- Medicine overuse headache বা cervicogenic headache.
Secondary Headache এর মারাত্মক কারণ গুলো হলো-
মস্তিষ্কের বাইরের পর্দার প্রদাহ (meningitis), মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (intracranial hemorrhage), মস্তিস্কের বাইরে রক্তক্ষরণ (Subarachnoid hemorrhage), মস্তিষ্কের টিউমার (Brain tumor), Temporal arteritis, Acute close angle
glaucoma (চোখের প্রেসার), Postictal headache (খিচুনি পরবর্তী মাথা ব্যাথা)।
কিছু লক্ষণ বা উপসর্গ আছে যা দিয়ে আমরা এই মারাত্মক Secondary কারণগুলো ধারণা করি এবং দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা করতে পারি। সে গুলোকে red flags বলে, যেমন-
* ৫০ বছরের পর নতুন করে মাথা ব্যথা
* হঠাৎ তীব্র মাথা ব্যথা
* পূর্বের চেয়ে ঘন ঘন অধিকতর তীব্র মাথাব্যথা
* জ্বর, rash ও ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া
* HIV বা ক্যান্সার রোগীর নতুন করে মাথা ব্যথা
* হাঁচি বা কাশিতে মাথা ব্যথা
* হাত বা পা অচল হওয়া
* মাথায় আঘাতের পর তীব্র মাথা ব্যথা
common headache গুলো নিয়ে আলোচনা করব।
Tension type headache : Tension headache সবচেয়ে বেশি কমন যা ২১শতাংশ লোকই উপলব্ধি করে।
আগে ধারণা করা হতো, এ ধরনের মাথাব্যথা মাংসপেশিতে tension-এর কারণে হয়। তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমানে ধারণা করা হয়, মাথা ও ঘাড়ের মাংসপেশির স্নায়ু কর্মতৎপর (activation) হয়ে ওঠার জন্য হয়।
প্রকৃত কারণ জানা না গেলেও কিছু উত্তেজক (trigger factor) এই মাথাব্যথার জন্য দায়ী, যেমন-
* মানসিক চাপ (stress)
* অনুপযুক্ত ভঙ্গিমা বা অবস্থান (posture)
* অপর্যাপ্ত ঘুম
* চোখের ক্লান্তি
* পানিশূন্যতা (dehydration)
* রক্তের কম শর্করা
Tension headache সাধারণত মৃদু থেকে মাঝারি তীব্রতা নিয়ে মাথার উভয় পাশে ব্যথা করে। মাথার উপরে চাপ, উভয় পাশে চাপ বা ফিতা দিয়ে মাথার চার পাশে চাপ অনুভূত হয়। এ মাথাব্যথা ৩০ মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা, এমনকি কয়েক দিনও থাকতে পারে।
প্রতিকার
* রোগীকে শিক্ষা এবং পরামর্শ (education and counseling)
* জীবনধারা পরিবর্তন- নিয়মিত ঘুম, মানসিক চাপ কমানো (lifestyle modify)
* উত্তেজক (trigger factor) বর্জন
* মেডিকেশন- প্যারাসিটামল, NSAID (Naproxen, Ibuprofen), Aspirin, Amitriptyline
মাইগ্রেন
মাইগ্রেন দ্বিতীয় common headache। মাঝারি থেকে তীব্র মাথাব্যথা হয়। ২০ শতাংশ মহিলা এবং ৬ শতাংশ পুরুষ Migraine মাথাব্যথায় ভোগে। মাথাব্যথার সঙ্গে ২০ শতাংশ লোকের sensory উপসর্গ (Aura) থাকে। Aura সাধারণত চোখের সামনে তারা জ্বলজ্বল করে বা পর্দার মতো পড়ে। ১৫ থেকে ৩০ মিনিট স্থায়ী হয়। এরপর মাথার একপাশে ছটকানো (pulsatile /throbbing) মাথাব্যথা হয়, যা ৪ ঘণ্টা থেকে ৩ দিন স্থায়ী হতে পারে। মাথাব্যথার সঙ্গে বমি বা বমি বমি ভাব, আলো ও শব্দ সংবেদনশীলতা থাকে। Migraine-এর প্রকৃত কারণ জানা যায়নি। পূর্বে রক্তনালির প্রসারণকে দায়ী করা হতো। বর্তমানে মস্তিষ্কের স্নায়ু বিকলতা (Dysfunction)কে দায়ী বলে ধারণা করা হয়। তবে কিছু উত্তেজক (trigger) Migraine মাথাব্যথাকে ঘটায়। এগুলো হলো-
* চকলেট, পনির, প্রক্রিয়াজাত মাংস, সিম, বাদাম, দুধ, মাখন ও ঘি
* আলোর ঝলকানি
* তীব্র শব্দ
* তীব্র ঘ্রাণ
* অতিরিক্ত ঠাণ্ডা ও গরম
প্রতিকার
* উত্তেজক এড়িয়ে চলা
* মাথাব্যথা কমানোর জন্য মাঝারি ব্যথায় প্যারাসিটামল, অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রফেন ব্যবহার করা যায়। সঙ্গে বমির জন্য ডমপেরিডন খাওয়া দরকার। তীব্র ব্যথা হলে ট্রিপটেন জাতীয় ওষুধ যেমন- almitriptane, rizatriptane খেতে হবে।
* মাথাব্যথা যদি মাসে দুবারের বেশি হয়, ১২ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয় বা তীব্র মাথাব্যথা হয়, তাহলে প্রতিরোধের জন্য বিটাব্লকার, এমিট্রিটাইসিন বা anticonuvlsant (valproate, topiramate) ব্যবহার করা যায়।
* Biofeedback, চিকিৎসকের পরামর্শ।
Cluster headache
Cluster headache-এ তীব্র মাথাব্যথা হয়। এ ধরনের মাথাব্যথা খুব কম হয় (rare). Cluster headache দিনের নির্দিষ্ট সময় এক পাশের চোখের চতুর্দিকে তীব্র ব্যথা হয়। ব্যথার সঙ্গে চোখ ও একই পাশের নাক দিয়ে পানি পড়ে এবং চোখ লাল হয়। ব্যথা ১৫ মিনিট থেকে ১৮০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়। দিনে ১-২ বার হতে পারে। এমনই করে একনাগাড়ে কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহ হতে পারে। তারপর কয়েক মাস বা বছর ভালো থাকে।
প্রতিকার
* চর্মের নিচে Sumatriptan ইনজেকশন বা ১০০ শতাংশ অক্সিজেন
* প্রতিরোধ Lithium, verapamil বা Steroid
Chronic daily headache
তিন মাসের বেশি সময় ধরে যদি মাথাব্যথা মাসে ১৫ দিন বা তার অধিক সময়কাল হয়ে থাকে তাকে Chronic daily headache বলা হয়। ৪ ধরনের প্রাইমারি headache-এ এরকম হতে পারে। যেমন-
* Chronic migraine
* Chronic tension headache
* New daily persistent headache
* Hemicranias continua
Sinus Headache
Sinus Headache সাইনাস প্রদাহের ফলে হয়। গালের উঁচু স্থানে, নাকের গোড়া ও কপালে সার্বক্ষণিক মৃদু ব্যথা এবং সঙ্গে জ্বর সর্দি থাকে।
Medication Overuse Headache
মাথাব্যথার জন্য যদি কেহ সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন বা মাসে ১০ দিনের বেশি মাথাব্যথার ওষুধ খায়, তবে এ ধরনের মাথাব্যথা হতে পারে।
মাথাব্যথায় চিকিৎসকের পরামর্শই উত্তম।