বড় শিল্প গ্রুপের মুড়ি চানাচুর মসলার ব্যবসা মানায় নাঃ এনবিআর চেয়ারম্যান

nbr-chairman-bangladesh-collected
Spread the love

আগামী বাজেটে ধ্যানের ওপরও করারোপ হবে, আইএফএ’র শর্তপূরণে কর-জিডিপির অনুপাত বাড়বে ৭ শতাংশ

এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘এখন সময় এসেছে কে কোন ব্যবসা করবে তা ঠিক করার। কিন্তু বড় শিল্প গোষ্ঠীগুলো যদি মুড়ি, চানাচুর আর মসলা বানায় তাহলে মানায় না। এখন বড় শিল্প গ্রুপগুলোর উচিত বিমান বানানো কিংবা ভারী শিল্পে বিনিয়োগ করা। রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নবনির্মিত জাতীয় রাজস্ব ভবনে (এনবিআর) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।

সভায় ইআরএফ’র পক্ষ থেকে সীমিত আয়ের জনগণকে স্বস্তি দিতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা দুই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করাসহ রাজস্ব ফাঁকি রোধে ২৩ ধরনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন ইআরএফ’র সভাপতি মো. রেফায়েত উল্লাহ মীরধা ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম প্রমুখ।

আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার থেকে প্রাক-বাজেট আলোচনা শুরু করেছে এনবিআর। দ্বিতীয় দফায় রোববার ইআরএফ’র সঙ্গে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে প্রথমদিন আলোচনা হয় ‘নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’ (নোয়াব) এবং টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব টিভি চ্যানেল ওনার্স’ (অ্যাটকো) নেতাদের সঙ্গে।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাজেটটা যে আমার (জনসাধারণ) জন্য করা হয়, এটা বোঝার মতো জ্ঞান সাধারণ মানুষের নেই।

বাজেটের মূল উদ্দেশ্যই থাকে নিউ মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে মধ্যবিত্তে উন্নীত করা। মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে নিয়ে যাওয়া। মানুষের অবস্থার উন্নতি ও মাথাপিছু আয় বাড়ানো।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশকে উন্নতির দিকে নিতে হলে এখন বড় বড় শিল্পে বিনিয়োগের চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। এছাড়া কর্মসংস্থানের জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে উৎসাহ দিতে হবে। বড় শিল্প গ্রুপগুলো যদি এসএমই’র জায়গা খেয়ে ফেলে তাহলে বড় শিল্পে বিনিয়োগ করবে কে। এখন নির্ধারণ করা দরকার-কে কোন ধরনের ব্যবসা করবে। প্রয়োজনে নিয়মকানুন সংশোধন করতে হবে। মুড়ি ভাজা, চানাচুর ভাজা বড় কোম্পানিগুলোকে মানায় না।’ তিনি জানান, আগামী বাজেটে ধ্যানের (মেডিটেশন) ওপরও করারোপ করা হবে। কেননা সাধারণ মানুষ পেটের দায়ে ধ্যান করে না।

আলোচনায় ইআরএফ নেতারা বলেন, একজন ব্যক্তির মাসিক আয় ৪১ হাজার ৬৬৬ টাকা বা তার বেশি হলে তাকে করের আওতায় আনা হবে। অন্যদিকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট একজন ব্যক্তির মাসিক আয় ২৫ হাজার টাকার বেশি হলেই তিনি করের আওতায় ছিলেন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণ করতে আগামী বাজেটে কর-জিডিপির অনুপাত দশমিক ৫ শতাংশ বাড়াতে হবে। ধারাবাহিকভাবে পরের দুই বছরে দশমিক ৫ শতাংশ ও দশমিক ৭ শতাংশ হারে বাড়াতে হবে। বাড়তি এই রাজস্ব আহরণে করের হার না বাড়িয়ে আওতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

দেশে ইটিআইএনধারীর সংখ্যা ৮৬ লাখের মতো জানিয়ে বক্তারা আরও বলেন, আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন ২৮ লাখ। বাকি ইটিআইএনধারীদের রিটার্ন দাখিলে বাধ্য করতে হবে। একই সঙ্গে আয়কর ও ভ্যাট ফাঁকি রোধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন।

বাজেট আলোচনায় ইআরএফ’র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক লিখিত প্রস্তাব দেন। উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে-২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ধাক্কা সামলাতে এখন থেকেই গতিশীল রাজস্ব প্রশাসন গড়ে তুলতে হবে। ডব্লিউটিও বাউন্ড ট্যারিফ কার্যকর করার পদক্ষেপ আগামী অর্থবছর থেকেই পর্যায়ক্রমে আগামী ৩ অর্থবছর ধরে প্রস্তুতি নিতে হবে। এ কার্যক্রম আগামী অর্থবছর থেকে শুরু করা দরকার। এছাড়া এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী প্রতিযোগিতামূলক অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকার জন্য দেশীয় শিল্পের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) বিষয়টি বিবেবচনায় রেখে শুল্কহার যৌক্তিক করা দরকার। বাংলাদেশে শুল্কহার এলডিসিগুলোর গড় শুল্কহারের তুলনায় বেশি এবং প্রটেকটিভ ট্যারিফ গড়ে ২৮ শতাংশ। এই হার কমিয়ে আনতে হবে। এছাড়া আইএমএফ’র শর্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সরকার জুনের মধ্যে খসড়া কাস্টমস অ্যাক্ট ও খসড়া আয়কর আইন বিল আকারে পাশ করতে চায়। এরপর ১ জুলাই থেকে কার্যকর করার পরিকল্পনা করছে। আইএমএফ’র চাপে তাড়াহুড়ো করে আইন দুটি প্রণয়ন ও প্রয়োগ করতে গিয়ে যেন সাধারণ মানুষের ওপর বাড়তি করের চাপ দেওয়া না হয়। সেই সঙ্গে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। আরও বলা হয়, বাংলাদেশের সীমিত আয়ের জনগণকে কিছুটা স্বস্তি দিতে ব্যক্তি খাতে করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা যেতে পারে। অটোমেশনের মাধ্যমে কর কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করাসহ ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করতে দীর্ঘদিন ধরে ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো চালু করতে হবে। কর অব্যাহতি সুবিধা সাধারণত এক কর বছরের মধ্যে বিনিয়োগের শর্তে দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো শিল্প স্থাপন ও উৎপাদনে আসতে দেড় থেকে দুবছর সময় লেগে যায়। এজন্য এই কর সুবিধা সাধারণত বিনিয়োগকারীরা পান না। এ ধরনের সুবিধা কমপক্ষে তিন কর বছরের জন্য দেওয়া হলে এর সুফল মিলবে। এছাড়া আগাম কর রিফান্ড ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। সহজে ও দ্রুততম সময়ে রিফান্ড পেলে মানুষের মধ্যে কর দেওয়ার আগ্রহ বাড়বে। দিনে দিনে এনবিআরে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। এর সঙ্গে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে যুযোপযোগী করতে হবে। কোনো কোনো কাস্টমস হাউজে এখনো কর্মকর্তাদের আইডি ও পাসওয়ার্ড হ্যাক করার মাধ্যমে পণ্য খালাসের ঘটনা শোনা যায়, যা দূর করা প্রয়োজন। ইটিআইএনধারীদের রিটার্ন দাখিলে বাধ্য করতে হবে।

হয়রানি ও দুর্নীতিমুক্ত রাজস্ব প্রশাসন গড়ে তুলতে শতভাগ ডিজিটাল রাজস্ব ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ওপর জোর দিতে হবে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বাস চালু বাধ্যতামূলক করা। বর্তমান আইন অনুযায়ী কাঁচামাল বা পণ্য আমদানির সময় ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে উৎসে কর কাটা হয়। এটি পরবর্তীতে সমন্বয় করে এনবিআর। তবে পণ্য বিক্রি করে কর সমন্বয়ের আগ পর্যন্ত ব্যবসায়ীর বড় আকারের মূলধন আটকে যায়। এভাবে ব্যবসার মূলধন আটকে না রেখে অন্য কোনো বিকল্প পদ্ধতিতে কর আহরণ করা যায়। তৈরি পোশাক শিল্পের মতো অন্যান্য রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্যও বন্ডেড ওয়্যারহাউজ সুবিধা চালু করা দরকার। আংশিক রপ্তানিকারকদেরও পরীক্ষামূলকভাবে এ সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। এতে রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণ সম্ভব হবে। বাংলাদেশে সম্পদের ওপর সারচার্জ বিদ্যমান আছে। তবে তা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। পর্যটন খাত বিকাশের স্বার্থে পর্যটকদের ভ্রমণে আকর্ষণ করতে বিভিন্ন ধরনের ছাড় দেওয়া যেতে পারে।

admin_bhashwakar

Learn More →

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *