নির্বাচনের আগে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার মিশনে নেমেছে দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল। ঢাকায় সমাবেশ, পদযাত্রা, বিভাগীয় সমাবেশ, ত্রি-বার্ষীক সম্মেলনের পর এবার দুই দল মুখোমুখি হচ্ছে ইউনিয়ন পর্যায়ে। লক্ষ্য তৃণমূল চাঙ্গা করা।
ইউনিয়ন পর্যায়ে আজ আওয়ামী লীগ করছে শান্তি সমাবেশ। একই সঙ্গে বিএনপি করছে পদযাত্রা। এতে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা এবার তৃণমূল পর্যায়ের কর্মসূচিতেও মুখোমুখি হচ্ছেন।
দুই দলের দায়িত্বশীল নেতারা বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও আন্দোলনকে সামনে রেখে রাজপথ দখলে রাখতে চান তাঁরা। সরকার পতনের আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে বিএনপি মাঠে নামলে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে অবস্থান নেবে আওয়ামী লীগও।
প্রধান দুই দলের এমন কর্মসূচি ঘিরে রাজনীতিতে বেশ উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। রাজধানীতে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে দুই প্রতিপক্ষ মাঠে থাকলেও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে ইউনিয়ন পর্যায়ে দুই দলের কর্মসূচি ঘিরে সংঘাতের শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
পদযাত্রা শুরুর আগের দিন শুক্রবার বিএনপির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চলমান গণ-আন্দোলনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শনিবার দেশব্যাপী ইউনিয়নে পদযাত্রা হবে। দলটির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বিদ্যুৎ, গ্যাস, চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সেবা ও পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ এবং ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ নেতা-কর্মীদের মুক্তি ও সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে পদযাত্রা হবে।
এতে নেতাকর্মীসহ শ্রেণি-পেশার জনগণকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে শুরু হয়েছে বিএনপির এই পদযাত্রা। কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা নিজ নিজ এলাকায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে পদযাত্রায় অংশ নিচ্ছেন।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুকে পেজে শুক্রবার দেওয়া পোস্টে বলা হয়, ‘বিএনপির নৈরাজ্য ও সহিংসতার প্রতিবাদে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) সারা দেশে প্রতিটি জেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে একযোগে শান্তি সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জেলার নেতাদের সঙ্গে যোগ দেবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এ শান্তি সমাবেশ সফল করতে ৪০টি জেলার কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা উসকানি না দিলে বা সহিংসতার চেষ্টা না করলে কর্মসূচি ঘিরে সংঘর্ষ হবে না।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, দলীয় সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার কর্মসূচিতে অংশ নিতে বলা হয়েছে। এ সমাবেশের মধ্য দিয়ে বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলার পাশাপাশি নিজেদের নির্বাচনী প্রস্তুতির কাজও এগিয়ে নিতে চাইছে আওয়ামী লীগ।
দেশের আট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকরা ইউনিয়ন পর্যায়ের শান্তি সমাবেশ পালনের বিষয়টি তত্ত্বাবধান করছেন।
রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত নাশকতা করার চেষ্টা না করলে তৃণমূলে কোনো সংঘর্ষ হবে না। আমরা কাউকে আঘাত করব না, কেউ আঘাত করার চেষ্টা করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিহত করব।’
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপির দাবি গ্রাম-ইউনিয়নে ছড়িয়ে দিতে পদযাত্রা করা হবে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের আন্দোলন নতুন মাত্রা পাবে।’